মিরসরাইয়ে শেষ সময়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা


 আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শুভ্র কাশফুল আর শিউলি ফুলের গন্ধ জানান দিচ্ছে শরতের আগমন। শরতে উদযাপিত হয় সনাতনী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে সনাতনী সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ইতোমধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন পরে সারাদেশের ন্যায় মিরসরাই উপজেলায়ও ষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। এ দুর্গোৎসবকে ঘিরে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় চলছে সাঁজ-সাঁজ রব। পূজার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পূজারি থেকে শুরু করে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরাও। আলোক সজ্জার সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরে প্রতিমা শিল্পীরা রঙ তুলির আছড়ে যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে সুদর্শন প্রতিমাগুলো। সবমিলিয়ে প্রতিটি এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে মহাআনন্দের ছোঁয়া।


এদিকে শারদীয় দুর্গা পূজা উপলক্ষে প্রতিটি মন্দিরের বাড়িতে আলোকসজ্জার পাশাপাশি ধনুচি নাচসহ মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করা হয় নারিকেলের নাড়ুসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার।

মিরসরাই উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও স্বাড়ম্বরে শারদীয় পূজা উদযাপনের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। এবার উপজেলায় ৯০টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। যার মধ্যে ৫টি ঘট পূজা (প্রতিমা বিহিন) হবে। পূজা মণ্ডপগুলোকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ৫০টি পূজা মণ্ডপের দায়িত্বে থাকবেন জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। বাকী ৪০টি মিরসরাই থানা পুলিশের দায়িত্বে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা শিল্পীরা নির্ঘুম রাত এক করে কাজ করছে। ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়ার করার সময়ও নেই। রাতদিন এক করে শুধুই কাজ চলছে।

ফরিদপুর থেকে মিরসরাইয়ে প্রতিমা তৈরি করতে আসা সজিব রায় বলেন, আমরা এবার প্রায় ৩৮টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। যার মধ্যে মিরসরাইয়ে ২টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। প্রতিটি প্রতিমা তৈরিতে আকারভেদে ২৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়ে থাকি। সবগুলো প্রতিমার কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি প্রতিমার রংয়ের কাজ বাকী রয়েছে।



তিনি আরও বলেন, প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় মাটি, খড়, পাট, কাপড়, বাঁশ ও রং ইত্যাদি। কারিগরের সুনিপুণ হাতের কাজে প্রতিমাকে আরও বেশি উজ্জ্বল ও সুন্দর করে তোলে।

মধ্য তালবাড়িয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী রক্ষা কালী বাড়ির মন্দির ও দূর্গা মন্দির (দেবত্ব) কমিটির সভাপতি অভি রায় বলেন, দুর্গাপূজা সার্বজনীন। মিরসরাইয়ের মধ্যে আমাদের পূজাটি সেরা হবে বলে আসা করছি। পূজা উদযাপন কমিটি ও গ্রামের সবার সহযোগিতায় পূজার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক বৈঠক। পূজা মণ্ডপে যেন মাদকমুক্ত থাকে এবং কোনো প্রকার অপরাধমূলক কাজ যাতে সংগটিত না হয় সেই জন্য স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি।

মিরসরাই উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব মোহন দে বলেন, মিরসরাই উপজেলায় ৫টি ঘট পূজাসহ মোট ৯০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপের সভাপতি-সম্পাদক ও উপজেলার প্রশাসনের সঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্বিক প্ররিস্থিতি ভালো আছে। আশা করছি অত্যন্ত সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে পারবো। আগামী ৯ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্যে থেকে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের ও জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম শিফাতুল মাজদার বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূজা উপলক্ষে প্রতিটি মন্দিরে বসানো হচ্ছে সিসিটিভি। প্রতিটি মন্দিরে থাকবে আনসার ও গ্রাম পুলিশ। এছাড়াও পুলিশের বিশেষ টিম টহলে থাকবে।

তারা আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি অত্যন্ত সুন্দরভাবে এবার পূজা সম্পন্ন হবে। এবার মিরসরাইয়ের ৯০টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। যার ৫০টির দায়িত্বে থাকবে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। বাকী ৪০টির দায়িত্বে মিরসরাই থানা পুলিশ।

Comments

Popular posts from this blog

মানিকগঞ্জে হিন্দুদের জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ

ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ে এক মাসের মাথায় সেই স্বামীর হাতে খুন স্ত্রী!

বাংলাদেশ হিন্দু ছাত্র পরিষদ পটিয়া উপজেলা ছাত্র পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সনাতনী মেধাবৃত্তি পরীক্ষার 24 সাল ভাবে সম্পূর্ণ